*
আকাশে গগণ বিদারী জোছনা , আমি জংগলের দিকে এগুচ্ছি , কাধে বস্তা বন্দি কোনো প্রিয়মুখের খন্ড খন্ড করে কাটা লাশ। বস্তা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে ,গাড় লাল কড়া রক্ত । কিছু জমে যাওয়া রক্ত কণা চাদের আলোকে প্রতিফলিত করছে । চিকচিক করছে । ব্যাপার টা ভালো লাগছে আমার , মনে হচ্ছে আকাশের তারা মাটিতে নেমে এসেছে । রক্ত কণা গুলা তারার মত কিছুটা জল জল করছে । রাত প্রায় ৩টা ,চারিদিকে শুনশান নীরবতা । আমি ধীরে ধীরে হালকা থেকে ঘন বনের দিকে এগুচ্ছি । কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যত ঘন বনের দিকে এগুচ্ছি ততই মনে হয় হালকা লাগছে সেটা ! এমন তো হওয়ার কথা না ! পৃথিবীতে এই মুহূর্তে কোনো কিছুই আমার কাছে গোপন মনে হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে লক্ষ কোটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে লাশের টুকরা গুলা কোথায় নিয়ে পুতবো সেটা দেখার অপেক্ষায় !!! আমার ধারণা পুরোপুরি ভুল না, একটু পরেই পেছনে কিসের যেনো শব্দ শুনতে পেলাম ! কেউ আমার পিছু নিয়েছে ! দু পেয়ে না ...চারপেয়ে জীব । বড় বড় কয়েকটা শেয়াল দেখতে পাওয়া গেলো ! কাচা মাংসের গন্ধ পেয়ে চলে এসেছে ! ওদের চোখ গুলোও জল জল করছে । কী ভয়ঙ্কর চাহুনি...! তবে আমার চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর নয় ! আজ রাতে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর জীব আমি !! নইলে এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা খুব কষ্ট সাধ্য ছিলো । শেয়াল গুলো আকারে বেশ বড়সড় । দেখেই মনে হয় ওদের জন্মই হয়েছে টুকরো করা লাশ টেনে হিচড়ে খাওয়ার জন্য , কৃষকের মুরগী চুরি করে খাওয়ার জন্য নয় ! এক কাজ করা যায়...! কষ্ট করে আর না এগিয়ে ওদের খাবার এর ব্যবস্থা করলেই হয় । বেচারারা এতো কষ্ট করে পিছু পিছু আসছে । কেমন যেনো একটা মায়ার জন্ম নিয়েছে । আমি হাটা বন্ধ করে দাড়াই , কাধ থেকে বস্তা নামাই । বস্তার মুখ খুলতে গিয়ে হঠাত থমকে যাই । নাহ, বস্তা খোলা যাবে না ,কিছুতেই খোলা যাবে না । আমি তো আজ থেকে ভিন্ন মানুষ হয়ে গেছি । মনে দয়া মায়ার স্থান দেয়া যাবে না । যার উপর মায়া জন্মাবে তাকেই বিদায় করে দিতে হবে । নিয়ম অনুযায়ী এই শেয়াল গুলো কেও টুকরা টুকরা করে ফেলতে হবে । আমি ধীরে ধীরে কোমরে গুজে রাখা ছোরা টা বের করলাম... শেয়াল গুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে ,তাদের চোখে বিস্ময়...!! আমার চোখে হাহাকার ...রক্ত ঝরানোর তৃষ্ণা ... (------কবি ) ০২/১১/২০১৯ রাত ০৩ঃ২১